স্টাফ রিপোর্টার:
ভোলা জেলায় অনিয়ম আর অব্যাবস্থাপনার কারণে ৭টি বেসরকারী ডায়াগনষ্টিক ও হাসপাতালকে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার জেলা সিভিল সার্জনের একটি টিম জেলার ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় ডায়াগনষ্টিক ও হাসপাতালগুলোতে পরিদর্শণ করার পর এ ঘোষণা দেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেবার মান তদারকি ও নিশ্চিত করতে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) ভোলা সদর উপজেলায় সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এবং হাসপাতালগুলোতে সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি টিম পরিদর্শণে বের হন। এ সময় শহরের বাংলা স্কুল মোড়ে অবস্থিত ন্যাশনাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কে ২০১৯ সালের পর থেকে লাইসেন্স নবায়ন না করা এবং এক্স-রে, ল্যাব টেকনোলজিস্ট না থাকা, হাল নাগাদ মূল্য তালিকা না থাকা, ব্লাড সংগ্রহকারী না থাকা, প্যাথলজি বিভাগের সর্বত্রই অগোছালো ও নোংরা পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় সিলগালা করে দেয়া হয়। এ সকল ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্স বিহীন, প্যাথলজি বিভাগে অনিয়ম, ডাক্তার ছাড়া সিজারসহ নানান অভিযোগের প্রমান মিলে।
এছাড়া শহরের উকিলপাড়ায় অবস্থিত মাতৃ নিলয় ডায়াগনষ্টিক সেন্টার-২ ও মাতৃ নিলয় হাসপাতাল, বাংলা স্কুল মোড়ে অবস্থিত মর্ডাণ ডায়াগনষ্টিক এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস, মেঘনা হেলথ কেয়ার সেন্টার এবং যুগির ঘোল এলাকায় অবস্থিত জয়নাল আবদীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার-এ কিছু অনিয়ম আর ত্রুটি থাকায় তাদেরকে সতর্ক করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে ১৪ দিনের সময় দেয়া হয়েছে যাতে করে তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে। এরপরও যদি কোন প্রতিষ্ঠান তাদের সমস্যা সমাধান করতে না পারে কিংবা গরিমসি করে তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শফিকুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভোলা সদর আবাসিক মেডিকেল অফিসার তায়েবুর রহমান, ভোলা সদর মেডিকেল অফিসার ফাহমিদ খান, সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মাহাবুবুল আলম।
অন্যদিকে, একই দিনে ভোলার লালমোহন উপজেলায় নিবন্ধনহীন বেসরকারি ৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হসপিটাল অভিযান চালিয়ে সিলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। অভিযানে সিলগালা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- লালমোহন পৌর শহরের গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও গ্রীণ লাইফ হাসপিটাল, পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের মঙ্গলসিকদার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের লর্ডহার্ডিঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অভিযানকালে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমানসহ থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ অভিযানের বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নিবন্ধনহীনভাবে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলো তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল। যার জন্য অভিযান চালিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলায় অবৈধভাবে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হসপিটাল ভবিষ্যতে যেন কার্যক্রম না চালাতে পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি থাকবে।
অপরদিকে, চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানায় জেনারেল ডায়াগনস্টিক এন্ড ডক্টরস্ চেম্বার নামক প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে কাগজপত্র দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করায় সোমবার দুপুরে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দিয়েছেন।
জানা গেছে, ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সালেক মূহিদ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির অনুমতি এবং বিভিন্ন কাগজপত্র দেখতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তা সঠিকভাবে দেখাতে পারেনি। সঠিক কাগজপত্র না থাকায় এবং রোগীদের সাথে প্রতারণা করার দায়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন মালিক কর্তৃপক্ষের। যতদিন পর্যন্ত কাগজপত্র না হবে তত দিন পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকবে। অবৈধভাবে পরিচালিত সকল প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী ডাক্তার জাহিদুল ইসলাম। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান খুজে বের করে সিলগালা ও জরিমানা করায় ম্যাজিস্ট্রেট সালেক মূহিদকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন স্থানীরা।