চরফ্যাশন প্রতিনিধিঃ
চরফ্যাশনের চর নিজাম কালকিনি বিট কর্মকর্তা আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে হরিণ শিকারিদের ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দেওয়া, বনের গাছ কেটে বিক্রি, খাল-চর লিজ, বনে মহিষ রাখার অনুমতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি চর নিজামের উত্তরের কেউরা বাগান থেকে দুটি হরিণ জবাই করে মাংস প্রস্তুত করার সময় প্রায় ৯০ কেজি হরিণের মাংসসহ চার শিকারিকে আটক করে ৩০ হাজার টাকায় ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় মাংস ভাগ বাটোয়ারা করে শিকারিদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (১ মে) জবাই করা জব্দ ২টি হরিণের মাংসের ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এঘটনায় জেলায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করে বন কর্মকর্তার বিচার দাবি করেছেন পরিবেশবিদরা।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ শে ফেব্রুয়ারি চর নিজামের উত্তরের কেউরা বাগান থেকে শিকারিরা দুটি হরিণ জবাই করে মাংস প্রস্তুত করার সময় কামাল চৌধুরী, শারুখ, রুবেল, জাকিরকে প্রায় ৯০ কেজি মাংসসহ আটক করে বনকর্মীরা। পরে বিট কর্মকর্তা আব্বাস আলী ঘটনাস্থলে এসে ৩০ হাজার টাকার বিনিময় ওই শিকারীদের সাথে মাংসগুলো ভাগ বাটোয়ারা করে তাদের ছেড়ে দেন। বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে জানাজানি হলে হরিণের ২টি পা, ১টি চামড়া জব্দ দেখি ঘটনার সাথে জড়িত নয় মান্নান, আক্তার নামের দুই জনকে আসামি করে মামলা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে এ বিট কর্মকর্তা আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা জানান, চর নিজামে শত শত হরিণ রয়েছে। বিট কর্মকর্তা আব্বাস আলীকে ম্যানেজ করে এই চরের প্রভাবশালী হরিণ চক্রের সদস্যরা প্রতিনিয়ত বন থেকে হরিণ শিকার করে বিভিন্ন স্থানে মাংস পাচার করছেন।
তারা আরো অভিযোগ করেন, বিট কর্ককর্তা আব্বাস আলী চর নিজাম ও চর আনোয়ারায় সকল খালে মাছ ও কাকড়া শিকারের জন্য একই চরের নুরুল্যাহ ও কামরুল খলিফাকে অবৈধভাবে আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে মৌখিক ইজারা দিয়ে টাকা আত্মসাত করেছেন। ওই চরের বন থেকে খুঁটি জালের জন্য কেউরা ও ঝাউ গাছ কেটে জালের খুঁটি সংগ্রহ করার অনুমতি দিয়ে প্রায় ৫০ জন জেলের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এ বিট কর্মকর্তা।
তারা অভিযোগ করেন, আব্বাস আলী নিজের প্রভাব খাটিয়ে বনের খাল ও চর লিজ দিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শত শত কেউরা ও ঝাউ গাছ রাতের আঁধারে কেটে নৌকা যোগে সাম্রাজসহ বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করার অভিযোগও করেন তারা। বন বাগানের জমিতে প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের মহিষ রাখার মৌখিক অনুমতি দিয়ে মহিষ মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও আদায়সহ স্থানীয়দের বিভিন্নভাবে হায়রানি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে কালকিনি বিট কর্মকর্তা আব্বাস আলী এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই দিন আমরা ঘটনাস্থল থেকে হরিণের কোন মাংস পাইনি, শুধু ২টি পা, ১টি চামড়া জব্দ করেছি। হরিণ শিকারের সন্দেহে দুই জনকে আসামি করে ডিপার্টমেন্ট মামলা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভোলা বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ আরিফুল হক বেলাল বলেন, এ সকল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আমাদের জেলা কর্মকর্তা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এদিকে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দ্রুত এ দোষী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।