1. admin@news.bholarnews.com : admin :
রবিবার, ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

মেঘনার বুকে প্রদীপ জ্বালালেন জামাল উদ্দিন চকেট

  • প্রকাশ কাল শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

দৌলতখান প্রতিনিধিঃ

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষৎ। “সবার জন্য শিক্ষা, চলো স্কুলে যাই” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক হলেও ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের চর বৈরাগী গুচ্ছগ্রামের শিশুরা এখনো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। দরিদ্রতা, অসচেতনতার ফলে এসব শিশুদের সময়কাটে খেলাধুলা, নদীতে মাছ ধরে। একটি স্কুলের অভাবেই শিক্ষার আলো থেকে দূরে আছে এ চরের কয়েকশ শিশুরা। সরজমিন বিচ্ছিন্ন মদনপুরে কাচিয়া কাঠির মাথা থেকে প্রায় ১ ঘন্টা ইঞ্জিন চালিত ট্রলার যোগে যান এ প্রতিবেদক।

দেখা যায়, মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন এই চরে সাড়ে ছয় শত পরিবার বসবাস করছে। স্কুলে যাওয়া উপযোগী সহস্রাধিক শিশুর শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। যে শিশুর নরম হাতে থাকতো বই, কলম খাতা, তার বদলে সে শিশুর হাতে চায়ের কেটলি, মাছ শিকারের সামগ্রী আর গরু-ছাগলের রশি। ১০ বছরের শিশুই যেন পরিবারের কর্তা, অসচেতনতা, অপুষ্টিতে নানান রোগে আক্রান্ত এ শিশুরা। স্কুলে থাকার শিশু কেন এ ছোট্ট বয়সি পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিল ? এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে গিয়ে শিশু ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিচ্ছিন্ন এ চরে সরকার আসে, জনপ্রতিনিধি আসে, লিডার আসে কিন্তু চরবাসীর কথা কেউ ভাবে না। দখলদার, লুটপাট ও চুষে নেওয়াই তাদের ধান্দা।

চরবাসী অভাবে বিচ্ছিন্ন চরে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করলেও তারা ও চায় সন্তানদের সুন্দর জীবন দান করতে কিন্তু অর্থ আর যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ইচ্ছে কে চাপা দিয়ে সন্তানকে দিত হয়েছে ঝুকিপূর্ণ, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে। অবশেষে এ চরবাসীর সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিচ্ছিন্ন চরের শিশুদের আলোতে ফিরিয়ে নিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ’র নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিজেপির অংগসংগঠন শ্রমিক পার্টির ভোলা জেলার সভাপতি আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন চকেট।

চরবৈরাগী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে চরের শিশুরা এ স্বপ্ন এখন শিশু ও অভিভাবকদের মাঝে। শীঘ্রই উদ্বোধন হবে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একটি স্কুল ভাগ্য বদলে দিবে চরবাসীর এ প্রত্যাশা তাদের।

সাব্বির নামের এক শিশু স্থানীয় চায়ের দোকানের কর্মচারী, ১০ বছরের সাব্বির কেন স্কুলে যাচ্ছে না, জানতে চাইলে সাব্বির বলেন, স্কুল অনেক দুরে, তাই যাই না। রুপিয়া নামের এক শিশু বলেন, ইস্কুল নাই, পড়ি না।

জাহানারা বেগম নামের এক নারী বলেন, আমার ৫ ছেলে মেয়ে, নদীপথে এ শিশুদের ইস্কুলে যেতে ভয় হয় দেখে পড়ালেখা হয়নি। তবে এখন আমাদের এখানে একটা ইস্কুল চালু হইছে। সেখানে পড়াবো। রোকসানা বলেন, আমরা গরীব মানুষ, চরে থাকি, আশেপাশে স্কুল না থাকায় পড়াতে পারিনি এখন জামাল মিয়া একটা স্কুল করছে, সেখানে আমাদের পোলাপান পড়াবো। হযরত আলী নামের এক জেলে বলেন, চরবাসীর সন্তানের জন্য জামাল মিয়া একটি স্কুল খুলেছে, আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক নিরব বলেন, এ যুগের নেতারা শিশুদের অপরাধী করে তুলে, অনেকে মাদক তুলে দেয় আর জামাল মিয়া অন্ধকার থাকা শিশুদের আলোকিত করতে স্কুল চালু করেছে। চরবাসীর জন্য এটা আর্শিবাদ।

বৈরাগীর চরে এ প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাৎ হয় কাচিয়া ইউনিয়ন বিজেপির নেতা সিরাজুল ইসলাম মামুন এর সাথে। তিনি বলেন, আমি একটি কাজে এসেছি এ চরে, এখানে শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, একটা সুন্দর সমাজ গড়তে সবার আগে শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে আর এই চরের কয়েকশ শিশুকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রেখে সমাজ কে আলোকিত করা সম্ভব নয় তবে যতটুকু জানতে পেরেছি জেলা শ্রমিক পার্টির সভাপতি আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন মিয়া শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে একটি প্রাইমারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। চরবাসীর জন্য এটা আর্শিবাদ। আশা করি এ স্কুলের মাধ্যমে চরবাসীর সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে।

স্কুল সর্ম্পকে জানতে চাইলে আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন বলেন, সমাজের প্রতিটি শিশুর মৌলিক চাহিদা হচ্ছে শিক্ষা। এ চরের শিশুরা এ চাহিদা থেকে দূরে ছিল। আমরা মনে করি, প্রতিটি শিশুর শিক্ষায় সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। এ চরের শিশুরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আমরা দেখেছি অন্যদের মত চরের শিশুরার অনেক মেধাবী ও পড়ালেখায় বেশ মনেযোগি। আশা করি শিক্ষা গ্রহণের পর এদের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে, পরিবর্তন হবে বাংলাদেশের। চরের শিশুদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে আমি এ প্রতিষ্ঠান চালু করেছি। শীঘ্রই উদ্বোধন হবে। এ সময় তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চরের সন্তানদের শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিতে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

উল্লেখ্য, ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত মেঘনা নদীর মধ্যবর্তী চর বৈরাগিয়া। এই চরে সরকারের আশ্রায়ন প্রকল্পে ছিন্নমূল পরিবার বসবাস করছে। এ ছাড়াও কয়েক শত জেলে ও কৃষক পরিবার এই চরে বসবাস করছে।

শেয়ার করুন...

এধরণে আরও নিউজ