স্টাফ রিপোর্টারঃ
নেই জানালা-দরজা ও চেয়ার-টেবিল, শ্রেণীকক্ষ, কিংবা অফিসকক্ষ কোন রকমে দাড়িয়ে থাকা ঘরটি পরিণত হয়েছে জঙ্গল আর গোয়ালে। অথচ সরকারি খাতায় এখনও চালু একটি মাদ্রাসা। নিয়োগ নিয়ে প্রায় ২৫ বছরের গোয়াল ঘরেই রুপান্তর ঝির্ণশীর্ণ দুইচালা টিনের ঘর। পাঠদানহীন ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চরসামাইয়া এবতেদায়ী স্বতন্ত্র মাদ্রাসা। বছরের পর বছর যে ঘরখানা ছিলো গরু-ছাগলের আবাসস্থল। সেই ঘরখানাও আজ পেয়েছে জাতীয়করণ (এমপিও) মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার এর আওতাভুক্তির আদেশ। পশ্চিম চরসামাইয়া নামের স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার অস্তিত্ব শুধু একটি পরিত্যক্ত সাইনবোর্ড আর অফিসে থাকলেও বাস্তবে শিক্ষালয়ের কোন অস্তিত্ব নেই তার।
মাদ্রাসাটি কাগজে-কলমে বছরের পর পর পাঠদান দেখানো থাকলেও চেনেন না ওই এলাকার মানুষরা। এভাবেই চলছে ভোলা সদর উপজেলার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় মানুষগুলোর কোমল মতি শিশুরা। মাদ্রাসায় সামনে দেখা হয় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সাথে, এই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলে কি ? এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে শামিম বলেন, এটাতো আমার জন্মের পরে কখনো খুলতেই দেখিনি, এখানে পড়মু কেমনে। মাছ ধরে আসা শিশু কাইয়ুম সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। পড়েন পাশের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কেন এই মাদ্রাসায় পড়োনা তুমি, সেও জানায় আমিতো কোনদিন খুলতেই দেখিনি এটাকে। এখানে তো গরু পালে।
জানুয়ারী মাসের ৩০ তারিখে পশ্চিম চরসামাইয়া এলাকায় গিয়ে জানা যায়, এমপিও অনুমোদন না হওয়ায় দেড় যুগের বেশি সময় আগে বন্ধ হয়ে গেছে এই মাদ্রাসা। এদিকে জাতীয়করণের আদেশ পাওয়ার পরে সদর উপজেলার অনুমোদিত মাদ্রাসার খোঁজতে থাকেন এই প্রতিবেদক। তবে পশ্চিম চরসামাইয়া এলাকার এই মাদ্রাসা খুঁজে অনেক বেগপেতে হয়েছে প্রতিবেদককে। কেননা এলাকার কেউ এই নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চিনে না বলেই জানান স্থানীয় সুশীল সমাজের অনেকে। সবশেষে পশ্চিম চরসামাইয়া এলাকার নতুন বাজারে দেখা মিলে এক বৃদ্ধ পথচারীর সাথে। তিনি ঐ এলাকারই বাসিন্দা। তার সহায়তায় সন্ধান মিলে এই মাদ্রাসার, তবে তিনিও নাম জানতেন না মাদ্রাসাটির। তিনি বলতে পেরেছেন সামনে বড় একটি সাঁকো আছে সাঁকো পাড় হয়ে সহিদ মাঝি বাড়ির দরজায় একটি লম্বা ঘর বহু বছর ধরে পরে আছে। স্থানীয়রা দুর্যোগ মুহূর্তে সেখানে গরু ছাগল রাখেন, হয়তো সেটা নাকি গিয়ে দেখতে পারেন। এভাবেই সন্ধান মিলে পশ্চিম চরসামাইয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার। ঢুকতেই দেখাযায় তখনো গরু ছাগল মল-মুত্র আবর্জনায় আচ্ছাদিত ঘরখানা। সাংবাদিকদের উপস্থিতি জানতে পেরে ছুটে আসেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক রুবিনার ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্র। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের আওতায় এসেছে বিষয়টি তাদেরও অজানা। পরে তারা রুবিনা (প্রধান শিক্ষককে কল দিলে তিনি একজন রাজনৈতিক নেতার দোহাই দিয়ে জানান আমরা না খেয়ে কতকাল আর শ্রম দিবো ? তাছাড়া আমার প্রতিষ্ঠানে যেতে প্রতিদিন ৪০ টাকা ভাড়া দরকার, তাই খরচ পোষাতে না পেরে বছর ৫/৬ এর মত পাঠদান বন্ধ থাকলেও কাগজে কলমে দেখানো হয়েছে পাঠদান চলমান আছে। আমি মিথ্যা বলবো না ভাই, আমি যা সত্যি তা বলছি। সত্য যা বলেছেন তা তুলে ধরতে আপত্তি আছে কি ? এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এ বিষয়ে সংবাদ না প্রকাশের জোড়ালো অনুরোধ ও আবদার জানান। তিনি বলেন, দীর্ঘ যুগ পরে সরকার আমাকে একটু সুযোগ করে দিছে, এখানে লিখালেখি করে আমার ক্ষতি কইরেন না।
আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঘর পুনঃনির্মাণের ব্যাবস্থা করবো, আর ঘর করে কি করবো এখনো এ বছরের বই পাইনি, বই না হলে ছাত্র-ছাত্রী পাবো কোথায় তা বুঝতে পারছি না। তবুও একটা ব্যাবস্থাতো করতে হবে। দেখেন কি বলবো; আমি একা মানুষ, আমি আন্দোলনে যেতে হয় অফিসও ম্যানেজ করি, সবই একা বাকি শিক্ষকদের কোন খবরই নাই।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী যুগের পর যুগ যেখানে গোয়াল ঘর ছিলো, সেখানে এখন শিক্ষালয় হলে পরিবেশ সুন্দর হবে হয়তো, তবে এটা দেশ ও জাতির সাথে প্রতারণার সামিল। জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার ফজলে গোফরান বলেন, এরকম নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে এটা আমি এই প্রথম আপনার কাছে জানলাম। এরকম প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতাভুক্ত হওয়ার সমিচিন হতে পারে না। যদি আপনার কাছে ঐ প্রতিষ্ঠানটির ছবি থাকে আমাকে পাঠান আমি সরেজমিনে পরিদর্শণ করবো।