1. admin@news.bholarnews.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
৫৩তম বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শুভ উদ্বোধন বাস মালিক সমিতির ধর্মঘট প্রত্যাহার জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে আ.লীগকে বিক্ষোভ করতে দেওয়া হবে না ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত: প্রেস সচিব  মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না: রিজভী বাল্কহেডের ধাক্কায় নিখোঁজ জেলের মরদেহ ৯ দিন পর উদ্ধার যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে, ভোলায় বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাস চলাচল বন্ধ ভোলায় ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক সাবেক মেয়র আতিক ৪ দিনের রিমান্ডে মাঠে নামছেন শিক্ষকরা গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আজহারীকে কেন লাস্ট ওয়ারনিং দিলো ফেসবুক!

যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে, ভোলায় বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাস চলাচল বন্ধ

  • প্রকাশ কাল বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ভোলায় বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে উত্তেজিত বাস মালিক সমিতির স্টাফ ও শ্রমিকরা ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালে সিএনজি শ্রমিকদের অন্তত ৪টি সিএনজি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ভোলার অভ্যন্তরের অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বিকল্প পরিবহণ হিসেবে চলাচলের জন্য ব্যাটারী চালিত অটো রিকশার মাধ্যমে চলাচল করছে। তবে বাস মালিক সমিতির নেতারা বলছেন প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত এই ঘটনার সমাধান করা হলেই তারা বাস চলাচল স্বাভাবিক করবেন।

জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভোলায় বাস ও সিএনজি শ্রমিকদের মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মধ্য থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২ জনকে বরিশাল প্রেরণ করা হয়েছে। দুই দফায় পুড়ে গেছে ৯টি সিএনজি ও ৩-৪টি বাস। ভাঙচুর করা হয়েছে কমপক্ষে ৩৫ সিএনজি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে বুধবার সকালে পুনরায় বাস টার্মিনালে শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। এ সময় তারা সিএনজি মালিকদের অন্তত আরো ৪টি সিএনজিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ভোলা বাস টার্মিনালের সামনে সিএনজি যেন কোন ভাবেই অবস্থান নিতে না পারে তার দাবী জানিয়েছেন। এ খবার পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন জ্বলতে থাকা সিএনজিতে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

 

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন সিএনজি ও বাস মালিকদের মধ্যে সিএনজি চলাচল এবং স্টান্ড্যান্ডে অবস্থান নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এর জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং এক পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রথমে ইট পাটকেল নিক্ষেপ দিয়ে শুরু হলেও পরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বাস ও সিএনজি শ্রমিকরা। এ ঘটনায় দুই বারে ৯টি সিএনজি ও ১টি বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় ভাঙচুর করা হয় ৩৫টি সিএনজি ও ৩০টি বাস। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী, র‌্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় এতে সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে সাংবাদিক টিপু সুলতান, গিয়াস উদ্দিন (৩৫) সালাউদ্দিন (৩৫), নুরুল আমিন (৬৫), রাকিব (২৮), সুমন (২২), সোহেল (৩৫) নাম পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট বুধবার (দুপুর ৩টায়) লেখা পর্যন্ত বাস টার্মিনালে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভোলা বাস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, দীর্ঘ দিন যাবত সিএনজি মালিক ও শ্রমিকদের জন্য আমরা জ্বালা-যন্ত্রণা ভোগ করতেছি, তাদের জন্য কোন কথাই বলতে পারিনা। বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে যাত্রী উঠাতে গেলে সিএনজি শ্রমিকরা ওই যাত্রীদের টেনে তাদের সিএনজিতে নিয়ে যায়। তাই তাদের এই অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে বাস টার্মিনালটি ভোলা পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়েছি। আমরা পৌরসভাকে বলেছি আমাতের বাস ডিপো খালি করে দেন। তাই মঙ্গলবার পৌর কর্তৃপক্ষ বাস ডিপো খালি করার জন্য উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু তারা পৌরসভার নির্দেশনা অমান্য করে বাস ডিপোর সামনেই সিএনজি রাখা অব্যাহত রাখেন।

 

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি চরফ্যাশনে কেন্দ্রীয় যুবদল সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ভাই আসেন। সেখানে বাস মালিক সমিতির ৮০টি বাস রিজার্ভ যায়। এই সুযোগে সিএনজি মালিক-শ্রমিকরা বাস টার্মিনালে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাস মালিক সমিতির ৩-৪টি গাড়ীতে আগুন দেয় এবং ৩০টির উপরে গাড়ী ভাংচুর করে। এ সময় তারা দোকান ভাংচুর ও বাস মালিক সমিতির কাউন্টার লুট ও ক্যারানিসহ স্টাফদের মারধর করে। এ ঘটনায় অন্তত বাস মালিক সমিতির ১শ’ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বরিশালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় সুষ্ঠ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এদিকে ভোলার অভ্যন্তরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহিন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছেন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাটারী চালিত অটো রিকশার চলাচল করতে হচ্ছে। তারা আমাদের কাছ থেকে দ্বিগুন ভাড়া নিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের অনেকেই বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশনের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়া লেখা করি। বাসে আমরা হাফ ভাড়া দেই, কিন্তু এখন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের পুড়ো ভাড়াটাই দিতে হচ্ছে। আমরা এই সৃষ্ট সমস্যার সমাধান চাই।

বরিশাল থেকে আসা সুমন নামের এক ব্যক্তি বলেন, লঞ্চ থেকে নেমে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট থেকে আমি অনেক কষ্ট করে বাস টার্মিনালে আইছি। কিন্তু এখন এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। তাই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অপর এক যাত্রী বলেন, আমরা আগে ঘুইংগার হাটে যেতাম ১০টাকায়। কিন্তু এখন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বোরাক চালকরা আমাদের কাছ থেকে ২০ টাকা দাবী করছে। এছাড়াও সঠিক সময়ে পরিবণ না পাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সিএনজি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন বলেন, মঙ্গলবার রাতে বাস মালিক সমিতি পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়ে অন্তত ৩০টি সিএনজি ভাংচুর করে এবং ৫টিতে আগুন দেয়। আমাদের গাড়ীতে আগুন দেয়ার আগে তারা তাদের বাসগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। ওই সময় আমরা ফায়ার সার্ভিসকে ডাকাডাকি করার পরেও তারা গেট বন্ধ করে রাখে এবং আমাদের সিএনজির আগুন নেভায় নাই। পুনরায় আজ বুধবার আবার তারা আমাদের সিএনজিতে আগুন দিয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করছি।

প্রশাসন যদি অবৈধ সিএনজি এই সড়কে চলবে না, তা হলে ১ঘণ্টার মধ্যে আমরা ভোলার অভ্যন্তরে বাস চলাচল স্বাভাবিক করে দিবো এমনটাই জানিয়েছেন ভোলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান।

 

ভোলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বাচ্চু মোল্লা জানান, পৌর সভার নির্দেশ অনুযায়ী সিএনজি মালিকদের আমরা স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি সরিয়ে নিতে বলেছি। এ কারণে তারা উত্তেজিত হয়ে আমাদের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে মঙ্গলবার রাতে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুনরায় আজ বুধবার আবার দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। আমরা এই বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়ে বলেছি দুই গ্রুপকে একত্রিত করে সৃষ্ট ঘটনার সমাধান করে দেয়ার জন্য।

ভোলা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ ফারুক হোসেন হাওলাদার বলেন, গতকাল মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে সেই সময় আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আমরা সতর্ক এবং সজাগ ছিলাম বুধবারও এ ধরনের কোন অহিংস ঘটতে পারে। বুধবার আন্দোলন চলাকালে কে বা করা সিএনজিতে আগুন দিয়েছে তা আমরা দেখি নাই। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসার চেষ্টা করি, কিন্তু উত্তেজিত জনতার কারণে আমাদের ঘটনাস্থলে আসেতে দেরী হয়। পরবর্তীতে কোস্টগার্ড ও নৌ-বাহিনীর সহযোগিতায় ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার সরকার বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনা ঘটেছে। গতাকল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাস ও সিএনজি মালিকরা তাদের শ্রমিকদের সরিয়ে দিয়ে বাস টার্মিনাল খালি করে। উভয়পক্ষই আমাদেরকে কথা দিয়েছিল কেউ কারো কোন ক্ষতি করবে না। কিন্তু কে কার কথার উস্কানিতে আজ পুনরায় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সিএনজিতে আগুন দিয়েছে তা জানি না। আমরা বাস মালিক সমিতির শ্রমিকদের প্রসমিত করার চেষ্টা করছি। কোন পক্ষই এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় নাই। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এদিকে বর্তমানে ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টর্মিনালে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

শেয়ার করুন...

এধরণে আরও নিউজ