1. admin@news.bholarnews.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

প্রজাতন্ত্র’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ সহ সংবিধান সংস্কারে ৭টি সুপারিশ

  • প্রকাশ কাল বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন। গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ সুপারিশগুলো জমা দেওয়া হয়।

সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবধিকার সুনিশ্চিতকরণ এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ যথাক্রমে:

১. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন স্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র” প্রস্তাব।
২. ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা।
৩. প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস।
৪. অন্তর্বর্তী সরকার কাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব।
৫. বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ।
৬. শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ।
৭. মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎ যোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।

বিষয়গুলো হলো–ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, অন্তর্বর্তী সরকার কাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ এবং মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎ যোগ্যতা নিশ্চিতকরণ।

সুপারিশে রাষ্ট্র পরিচালনার বিদ্যমান মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’-এর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহারের সুপারিশ করেছে। তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘Republic’ এবং ‘Peoples Republic of Bangladesh’ শব্দগুলো থাকবে। ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি…’ কমিশন এই বিধান বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। সংবিধানের বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬(২) সংশোধন করে ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশি” বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।


এছাড়া একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং উচ্চকক্ষ সিনেট নামে পরিচিত হবে। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর। নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০টি থাকবে নারী আসন। অন্যদিকে উচ্চ কক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনয়ন এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে। এই কাউন্সিল হবে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আর এই কাউন্সিলের সদস্য হবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্ন কক্ষের স্পিকার, উচ্চ কক্ষের স্পিকার, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দল মনোনীত নিম্ন কক্ষের ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দল মনোনীত উচ্চকক্ষের ডেপুটি স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধিত্বকারী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের উভয় কক্ষের সদস্যরা ব্যতীত, আইনসভার উভয় কক্ষের বাকি সকল সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাদের মধ্য থেকে মনোনীত ১ জন সদস্য।

সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর। রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে। নিম্নকক্ষ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার বিধানের সুপারিশ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

শেয়ার করুন...

এধরণে আরও নিউজ