স্টাফ রিপোর্টার:
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান বাংলার চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপসকে সোমবার (৪ নভেম্বর) উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ৬ নভেম্বর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
সোমবার (৪ নভেম্বর) শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজজামানের আদালত এ আদেশ দেন। এ দিন আসামিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক মো. মহিববুল্লাহ।
এদিকে তাপসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারের কপি থেকে জানা যায়, তিনি জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে গান-বাজনার মাধ্যমে ভূমিকা রাখেন এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্যাডারদের উৎসাহ দেন। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/২৩৬/৩০৭/১০৯/১১৪/৩৪ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, জনাব, যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, সূত্রে উল্লেখিত মামলায় গ্রেফতারকৃত এজাহারনামীয় আসামি কৌশিক হোসেন তাপস (৪১), পিতা-দেলোয়ার হোসেন রাজা, মাতা-মেহের নিগার চঞ্চল, ঠিকানা বাসা/হোল্ডিং-১০, রোড- ৬৭, গুলশান-২, ওয়ার্ড নং-১৯, থানা-গুলশান-২, ডিএমপি ঢাকা, কর্মক্ষেত্রের ঠিকানা-৪৮ প্রণতী স্মরনী, ব্লক-জে, বারিধারা, (গান বাংলা টিভি), থানা-ভাটারা, জেলা-ঢাকা, বাংলাদেশকে আপনার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করিয়া জানাইতেছি যে, অত্র মামলার বাদী ইশতিয়াক মাহমুদ একজন ব্যবসায়ী।
গ্রেফতারকৃত আসামি একজন সংগীত শিল্পী, সে গত ১৮/০৭/২০২৪খ্রিঃ তারিখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের বিপক্ষে থেকে গান বাজনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্যাডারদের উৎসাহ ও ছাত্র জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে।
ঘটনার দিন ১৮/০৭/২০২৪খ্রিঃ তারিখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য বাদী অন্যান্য ছাত্রজনতার সাথে একত্রিত হয়ে উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৪নং সেক্টরস্থ আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছামাত্র উক্ত মঞ্চ হইতে ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ক্যাডার এজাহারনামীয় আসামিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ ও আর্থিক সহযোগিতায় অন্যান্য আসামিরা ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করিয়া দেশি ও বিদেশি অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া হত্যার উদ্দেশ্যে বাদীর ওপর অতর্কিতভাবে হামলা, মারধরসহ গুলি বর্ষণ করতে থাকে।
আসামিদের ছোড়া গুলির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাদীসহ ছাত্রদের অভিভাবক ও ছাত্রজনতা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। বাদী আত্মরক্ষা জন্য ছোটা-ছুটি করতে থাকাকালীন ইং ১৮/০৭/২০২৪ তারিখ বেলা অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় এজাহারনামীয় আসামিদের ছোড়া অনেক গুলি বাদীর পেটে, পিঠে, হাতে, মাথায় লাগলে বাদী গুরুতর আহত হয়।
উপস্থিত লোকজন একত্রিত হয়ে ভ্যান যোগে বাদীকে নিয়া বিভিন্ন হাসপাতালে গেলে আসামিরা বাদীর চিকিৎসায় বাধা প্রদান করেন। বাদী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে বাদীর পেটের গুলি বের করে চিকিৎসা গ্রহণ করে। বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সূত্রোক্ত মামলাটি রুজু হয়। ইং-০৪/১১/২০২৪ তারিখ রাত ০০.০৫ ঘটিকার সময় গান বাংলা টেলিভিশন কার্যালয় প্রগতী সরনি, ভাটারা থানা ডিএমপি ঢাকা হতে ডিবি পুলিশের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়। একই তারিখ রাত ০০.৫০ ঘটিকার সময় উত্তরা পূর্ব থানায় আসামিকে নিয়া হাজির হয়।
প্রাথমিক তদন্তে উক্ত আসামি অত্র মামলার ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে জানা যায়। আসামিকে জামিনে মুক্তি দিলে আইনশৃংখলার অবনতি সহ মামলার সুষ্ঠু তদন্তে ব্যাঘাতসহ আসামি দেশ ত্যাগ করার আশংকা রহিয়াছে। তদন্তে আরো জানা যায় যে, উক্ত আসামী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারকারের নেতা কর্মীদের উস্কানী প্রদান করেছেন।
আসামির ঠিকানা অত্র থানার বাহিরে হওয়ায় নাম ঠিকানা যাচাই করার জন্য ই/এস প্রেরন করা হইতেছে। আসামিকে ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হইয়াছে। তাহার প্রদত্ত তথ্যাদি যাচাই করিয়া দেখা হইতেছে।
উল্লেখ্য যে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মৃত্যুঞ্জয় পন্ডিত মিঠুন (বিপি-৯২২০২২৬৫৯৯) জিআর-১২/২০২৩ (মুক্তিগাছা) সংক্রান্তে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য কর্মস্থলে না থানায় আমি অফিসার ইনচার্জ উত্তরা পূর্ব থানা ধৃত আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করিলাম। আসামির বিরুদ্ধে পৃথক পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হইতেছে।
অতএব, মামলার তদন্ত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত আসামিকে জেল হাজতে আটক রাখিতে মর্জি হয়।