স্টাফ রিপোর্টার:
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উপকূলীয় জেলা ভোলায়। দানার প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে নদী ও সাগর। বৃহ¯পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে উপকূল জুড়ে বৈরীভাব। দুপুর ১২টা থেকে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ।
তুলাতলী বাঁধের বাসিন্দা রেহানা ও রাশিদা বলেন, ঝড় আসবে শুনেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি। আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও বসতঘর আর গবাদি পশু তো রক্ষা হবে না। এসব নিয়ে চিন্তিত আমরা।
এদিকে সতর্কতা সংকেত বাড়ায় বুধবার বিকেল থেকে পাঁচ রুট এবং বৃহ¯পতিবার সকাল থেকে সব রুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। এতে ভোলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ইলিশা ঘাটে অপেক্ষমাণ যাত্রী সালাউদ্দিন ও মোশারেফ বলেন, নদী উত্তাল থাকায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ, আমরা গন্তব্যে যেতে পারিনি। তবে অপেক্ষায় আছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যেতে পারব।
দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) উপ-পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, সতর্কতা সংকেত বাড়লে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবীরা মাঠে প্রচারণায় নামবেন, তবে আগে থেকেই তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিআইডব্লিটিএ সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় ভোলা-লক্ষ্মীপুরসহ অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের সব লঞ্চ চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে। গঠন করা হয়েছে ৯৮টি মেডিকেল টিম। এছাড়াও নগদ টাকা, শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য এবং চাল মজুদ রাখা হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার নদী উত্তাল থাকলেও আশা করি, জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও শহর রক্ষা এবং তীর সংরক্ষণ মিলিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার বাঁধ সুরক্ষিত থাকবে। যদিও ৬৩ কিলোমিটার মাটির বাঁধ রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ ৯নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।