স্টাফ রিপোর্টারঃ
ভোলায় প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো: নুরুল ইসলামকে দলিল টেম্পারিং করে নামজারী করা ও প্রতারণা করে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার কারণে আটক করেন ভোলা সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাছনাত। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে বিরোধীয় জমির মামলা শুনানি চলাকালে টেম্পারিং প্রমানিত হওয়ায় তাকে আটক করেন। পরে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করবে না মর্মে ক্ষমা চেয়ে স্বীকারোক্তিমূলক মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
এবিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত জানান, অভিযুক্ত নূরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রাথমিকভাবে সর্তক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়ে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। তবে, ভবিষ্যতে এ ধরনে কোন অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে এসিল্যান্ড আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তাকে জানিয়ে দিয়েছেন। প্রতারক নুরুল ইসলাম ভোলা সদর উপজেলার ১৬৭নং চর ইলিশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সি গ্রামের মৃত নজির আহমেদ মুন্সীর ছেলে।
জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সি এলাকার বাসিন্দা মো: সিরাজ মোল্লা, ফজিলাতুন্নেছা ও মো: হারুন গংরা একই এলাকার ফাতেমা বেগম, স্বামী মৃত তছির আহমেদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করে চৌহদ্দি অনুযায়ী দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছেন। সেখানে তারা বসত বাড়ি স্থাপন করে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু গত ২/৩ বছর ধরে স্থানীয় ভূমিদস্যু প্রতারক নুরুল ইসলাম মাস্টার ওই জমি তার দাবী করে আসছেন। গত দুই বছর আগে ওই জমির রাস্তার কাছে দোকান নির্মাণের কাজ শুরু করে ফজিলাতুন্নেছা। দোকান নির্মাণের কাজ বন্ধ করার জন্য নুরুল ইসলাম ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে একটি নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন। এছাড়াও তিনি ভূমি অফিসে দুটি মিস কেইস করেন। ওই ৩টি মামলায় ফজিলাতুন্নেছা গংদের পক্ষে রায় হয়। মামলায় হেরে গিয়ে নুরুল ইসলাম প্রতারনার আশ্রয় নেয়।
প্রতারক নুরুল ইসলাম অন্য একটি দলিল টেম্পারিং করে গুপ্তমুন্সী মৌজার বি,এস ৪৪৫নং খতিয়ানের বিবাদীয় নামীয় ৩৩৯৭ভোঃ/২০২৩-২৪নং নামজারী মোকদ্দমার আদেশবলে রেকর্ডকৃত ২৬৬১নং জমাখারিজ খতিয়ানে বিরোধীয় ভূমি তার নিজ নামে মালিকানা দাবী করে ১৭৬ভোঃ/২০২৩-২৪নং মিস মোকদ্দমা করে নিজের নামে নামজারী করে নেয়। এই নামজারী নিয়ে মিস কেইস করা হলে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) উভয়পক্ষকে ভূমি অফিসে ডাকা হয়। মঙ্গলবার এ্যাসিল্যান্ড মোহাম্মদ আবুল হাছনাত দু’পক্ষের শুনানিকালে নুরুল ইসলাম দলিল টেম্পারিং করে নামজারী করার প্রমান পান। দলিল টেম্পারিং করে নামজারী করার অপরাধে নুরুল ইসলামকে আটক করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাছনাত। পরে প্রথমবারের মতো সর্তক করে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করবে না মর্মে ক্ষমা চাইলে স্বীকারোক্তিমূলক মুচলেকা দিলে প্রতারক নুরুল ইসলামকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে প্রতারক নুরুল ইসলাম দলিল টেম্পারিং এর অপরাধ স্বীকার করে বলেন, আমি দলিল টেম্পারিং করে নামজারী করেছি। আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি। আমি দলিল টেম্পারিং করায় আমাকে আটক করা হয়। আমি এই অপরাধ আর কখনো করবো না মর্মে ক্ষমা চাইলে এ্যাসিল্যান্ড স্যারের কাছে মুচলেকা দিলে তিনি আমাকে ছেড়ে দেন। আর কোন সময় ফজিলাতুন্নেছা গংদেরকে হয়রানি করবো না বলে জানিয়েছি।
ভুক্তভোগী ফজিলাতুন্নেছা বলেন, আমরা ফাতেমা বেগম এর কাছ থেকে ২০ শতাংশ জমি ক্রয় করে ভোগদখ করছি। হঠাৎ গত ২/৩ বছর আগে নুরুল ইসলাম এসে বলে এই জমির মালিক সে। পরে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে। আমি রাস্তার সাথে দোকান ঘর নির্মানের কাজ করলে সেখানেও বাঁধা দেয়। দোকান নির্মাণের জন্য আনা কাঠসহ অন্যান্য মালামালগুলো বৃষ্টি নষ্ট হয়েছে। সে আমাদেরকে একাধিক মামলা দেয়। সবগুলো মামলায় আমাদের পক্ষে রায় আসে। নুরুল ইসলাম একটি দলিল টেম্পারিং করে তার নামে জমি নামজারী করে নেয়। সেটির মিস কেইস হলে রাজস্ব আদালতে শুনানিকালে এ্যাসিল্যান্ড স্যার তার দলিল টেম্পারিং এর প্রমান পান। পরে তাকে আটক করেন। সে ভবিষ্যতে আর এমন অপরাধ করবে না মর্মে ক্ষমা চাইলে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আমি নুরুল ইসলাম গংদের হয়রানী থেকে মুক্তি চাই। এ জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছি।
উল্লেখ্য, এর আগেও এই নামজারী বাতিলের জন্য ভূমি অফিসে মিস কেইস করা হলে নুরুল ইসলামের নামজারী বাতিল করা হয় এবং তৎকালীন এ্যাসিল্যান্ড আবি আবদুল্লাহ তাকে সর্তক করেন। কিন্তু এতেও থেমে থাকেনি ভুমিদস্যু নুরুল ইসলাম সে পুনরায় দলিল টেম্পারিং করে তার নামে নামজারী করে নেয়।