বিশেষ প্রতিনিধি:
ভোলার বোরহানউদ্দিনে দুটি সেতু নির্মাণের পর সংযোগ সড়ক ও ওয়াল না করেই চলে গেছে ঠিকাদার। দুই বছরের বেশি সময় কাজ ফেলে রাখায় বন্ধ হয়ে গেছে দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগ।
উপজেলা সদর ও হাটবাজারে যাতায়াত করতে ঘুরতে হয় কয়েক কিলোমিটার পথ। এতে অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে সময়।
ঠিকাদার কাজ রেখে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সেতুর কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দ্রুত সংযোগের কাজ শেষ করে সড়কে চলাচল স্বাভাবিক করার দাবি স্থানীয়দের।
মুন্সিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন আরসিসি সেতুর কাজ শেষ হয় দুই বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করে উল্টো রাস্তার মাটি কেটে প্রায় ১০ ফুট গভীর করে রেখেছে। সামান্য বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি এলেই কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় সংলগ্ন এলাকা।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সেতু নির্মাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালে ৩ মে মুন্সিরহাট সড়কে জোড়া সেতু নির্মাণ শুরু হয়। ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকায় সেতু দুটির কার্যাদেশ পায় ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স। প্রথমটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার ও প্রস্থে সাড়ে ৫ মিটার এবং দ্বিতীয়টি দৈর্ঘ্যে ২২ মিটার ও প্রস্থে সাড়ে ৫ মিটার। এ ছাড়া ১৬৫ মিটার সংযোগ সড়ক ও গাইডওয়াল নির্মাণের কথা ঠিকাদারের। ২০২১ সালের মে মাসে কাজ শেষ করে সড়কটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে সেতুর কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়ক ও গাইডওয়াল নির্মাণ না করে ফেলে রাখা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে টুয়েল নামে এক ব্যক্তি নির্মাণ কাজ দেখাশোনা করতেন। কাজের বিষয়ে কিছু বললেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। ভয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি পলাতক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অসমাপ্ত ওই দুই সেতু দিয়ে প্রতিদিন টবগী ও হাসাননগর ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষের চলাচল। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সেতুর কাজ শেষ হয়নি। উল্টো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর দুই পাশের চারটি সংযোগ সড়কে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ৮ থেকে ১০ ফুট গর্ত করে রেখেছে। সামান্য বৃষ্টি হলে বা জোয়ারের পানিতে সেখানে কোমরপানি জমে। যানবাহন দূরের কথা মানুষের চলাচল করতে পারে না পথ দিয়ে। মুন্সিরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে এ সেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিজল হক জানান, এলাকাবাসীর সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন এই সেতুই তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দিয়ে চলাচল সীমিত হওয়ায় আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। প্রথম সেতুর পশ্চিম পাশেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রাথমিক চিকিৎসা ও শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রচুর লোকসমাগম হয়। অসমাপ্ত সেতু দিয়ে চলাচল করায় প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে আগতদের। ফাতেমা নামে এক নারী জানান, কিছুদিন আগে সেতুর ৮ ফুট উঁচু ঢাল থেকে পড়ে তাঁর কোমর ভেঙে গেছে। এখন তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না।
ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাইদুল ইসলাম খান। তিনি জানান, ঠিকাদার যেটুকু কাজ করেছেন, সেটুকুর বিল দেওয়া হয়েছে। অসমাপ্ত কাজের বিল দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া কাজ শেষ না করায় ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।