ভোলা প্রতিনিধিঃ
২৫০শয্যা বিশিষ্ট ভোলা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ঢুকলেই মনে হবে কোন রেল স্টেশন বা লঞ্চ টার্মিনাল। শিশু ওয়ার্ডে সীট না পেয়ে খোলা বারান্দার ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে নবজাতক সহ অনেক শিশু রোগীর। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার খারাপ প্রভাবে প্রতিদিন ডায়রিয়া, জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে, ভোলা বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শিশুরা। প্রতিদিন তিন থেকে চার শত শিশু এসব রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে ভোলা সদর হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এসব শিশুদের বয়স এক সপ্তাহ থেকে থেকে ৭ বছর।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর শয্যা সংখ্যা ৬৪টি হলেও ভর্তি রয়েছে ২৬০ জনেরও অধিক শিশু। প্রতিদিন ৬০-৭০ জন শিশু ঠান্ডা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। যা হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে চার গুণেরও বেশি। ফলে এসব রোগীদের ওয়ার্ডের বাইরে হাসপাতালের মেঝে,বারান্দায়, চলাচলের পথে ,বাথরুমের পাশে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হঠাৎ করেই শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোলা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ, শিশু ওয়ার্ড, মেঝে ও বারান্দায় এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে ,গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৫ ‘শত অধিক শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ২৫০ জনের অধিক। যা ৬৪ জন কে যে নার্স সেবা দিত এখন ওই নার্স ২৫০ জন শিশুকে সেবা দিচ্ছে।
তানজিলা আক্তার নামে শিশু রোগীর এক স্বজন বলেন, আমি যখন আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই । এসে কোন সিট পাইনি বারান্দায় ফ্লোরে থাকবো সেখানেও জায়গা পায়নি। এখন বাধ্য হয়ে বাথরুমের পাশে বিছনা করে বাচ্চাকে নিয়ে আছি।
চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, সকালে চিকিৎসক রোগীদের দেখে যান, আর সারা দিন আসেন না। নার্সদের ওপর ভরসা করে থাকতে হয়।
কিন্তু এখানে অনেক রোগী থাকার কারণে তারা ও ঠিকমতো সেবা দিতে পারছে না। এতো রুগী তার মধ্যে ৩-৪ জন নার্স অনেকবার ডাকালেও তারা আসেনা , বাচ্চা নিয়ে তাদের কাছে যেতে হয়।
এখানে বাচ্চাকে চিকিৎসা করাতে এসে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি ।আমার বাচ্চা ও আরো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সদর হাসপাতালে দুইদিন যাবৎ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র ২০ দিনের শিশু তানহা। তার মা ফারজানা আক্তার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দার ফ্লোরে রেখে মেয়ের চিকিৎসা নিচ্ছেন। লিয়ানা গত ৫ দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। ফারজানা আক্তার বলেন, হঠাৎ করেই আমার নবজাতক মেয়েটির জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসে দেখি হাসপাতালে শয্যা নেই। অনেক শিশুই বাইরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছে। ডাক্তারা নিয়মিত আসে না নার্স থাকলেও এতো রোগীর চিকিৎসা দিতে পারছে না ,কোন সীট মিলছেনা। শিশুকন্যার জীবন নিয়ে খুব শংকায় রয়েছি।
তানহা ও লিয়ানা মত এক মাস ২০দিন বয়সী হামিম, ২মাস ২৫ দিন বয়সের মাইশা, মুনতাহা ১ মাস ২৩ দিন সহ অনেক শিশুর চিকিৎসা হচ্ছে দুরাবস্থপনার মাঝে
শিশু ওয়ার্ডটিতে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত নার্সরা জানিয়েছেন,
আমরা এখানে ৫/৬ জন নার্স রয়েছি আর রুগী রয়েছে ২৫০ জনের অধিক। হাসপাতালে কয়েকদিন যাবত জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। রোগীর চাপে আমাদের দম ফালোনোর অবস্থাও নেই। রোগীদের স্বজনরাও ডাকাডাকি করতে থাকেন। দেখা গেছে, সেবা দিতে দেরি হলে কোনো রোগীর স্বজন বিরক্তি প্রকাশ করেন, আবার কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সারাদিনে আরও রোগী ভর্তি হবে। কাকে রেখে কাকে চিকিৎসা দেব? প্রত্যেক রোগীর স্বজনরা চাচ্ছে তাদের রোগীকে আগে চিকিৎসা দিতে। কিন্তু সকল রোগীকেই আমাদের সেবা দিতে হচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি।
ভোলা সদর হাসপাতালের ডাঃ সৈয়দ আবু আহাম্মদ সাফী ( তত্ত্বাবধায়ক ) বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত শিশুদের জ্বর ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, ডায়রিয়া এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগে যেন আক্রান্ত না হয় সেজন্য মা বাবার উচিৎ শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, শুকনো ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খাবার খাওয়ানো। সর্বোপরি মা বাবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে কিছু প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এক সাথে ২৩০-২৫০ জন শিশু রোগীকে সেবা দিতে স্টাফদের কষ্ট হচ্ছে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে এখানেই শিশুদের থাকতে হচ্ছে আমরা এ বিষয় নিয়েও কাজ করছি। আমাদের এখানে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে রয়েছে আমরা চিকিৎসকের বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানানো হয়েছে আশা করছি সব কিছু দ্রুত সমাধান হবে।