স্টাফ রিপোর্টারঃ
“৫ই আগস্ট” বাংলাদেশে এ দিন নতুন এক ইতিহাসের সূচনা হয়। ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশ ছাড়ার পর থেকেই গা ঢাকা দেন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এমনকি পালিয়ে থাকতে শুরু করেন আওয়ামী লীগপন্থি বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও। যার ফলে দেশে একে একে সৃষ্টি হতে শুরু করে উদ্ভূত পরিস্থিতি। তবে এর কয়েকদিনের মাথায় নতুন করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিনের মাথায়ই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের প্রায় সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। অব্যাহতি দেওয়া হয় পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরদেরও। বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। যার ফলে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এসে পড়ে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত ইউএনওদের কাঁধে। সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্যও মানুষ সবার আগে ছুটছেন ইউএনওদের কাছে। এখন যেন জনসাধারণের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনওগণ। আইনের মধ্যে থেকেই ইউএনওরা জনগণের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এমনি এক ইউএনও ভোলার লালমোহন উপজেলার মো. তৌহিদুল ইসলাম। তার কাঁধেও বর্তমানে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং দুই ইউনিয়ন পরিষদসহ উপজেলার অন্তত একশত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব। এছাড়া গণশুনানি, বিভিন্ন বিরোধ মিমাংসা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণসহ প্রতিদিন নানাবিধ সামাজিক কর্মকা-ও পরিচালনা করেছেন তিনি। অন্যদিকে বর্তমানে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নেও নিয়মিত রাতভর অভিযান পরিচালন করছেন ইউএনও। এমন কর্মতৎপরতা দেখলে মনে হবে যেন তার কোনো ক্লান্তি নেই, নির্বিঘেœ ও সুন্দরভাবে ইউএনও মো. তৌহিদুল ইসলাম তার প্রতিটি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
চতলা মোহাম্মদীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হাই বলেন, ইউএনও আমাদের উপজেলার সকল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদরাসা এবং কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। যার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আমাদের তার কাছেই যেতে হয়। গেলেই দেখি তিনি নানান কাজে অনেক ব্যস্ত থাকেন। একজন ইউএনও উপজেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাকে এতো চাপের মধ্যে রাখা মোটেও ঠিক না। তবে অনেক চাপ থাকা শর্তেও আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সব কাজই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে করছেন।
এদিকে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলামের কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও। লালমোহন উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি হাফেজ মাওলানা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ইউএনওর ওপর অনেক দায়িত্ব। তবুও তিনি অনেক আন্তরিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তার কাছে গেলে তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে নানা পরামর্শ দেন। তার এই আন্তরিকতায় সকলেই সন্তুষ্ট।
লালমোহন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম দুলাল বলেন, বর্তমানে ইউএনওর দায়িত্ব কয়েকগুণ বেড়েছে। যা সামলানো খুবই কস্টসাধ্য। তবে লালমোহনের ইউএনও খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবুও এতো দায়িত্বের কারণে তিনি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তাই আমি মনে করছি; তার আগের যেসব দায়িত্ব ছিল দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেসব দায়িত্বেই তাকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ইউএনওর দায়িত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে আমাদেরও কাজের চাপ বেড়েছে। বর্তমানে আমাদের রাত-বিরাতেও অফিশিয়াল অনেক কাজ করতে হচ্ছে। অনেক সময় কাজের চাপে সময় মতো খাওয়ারও সুযোগ হয় না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লালমোহন উপজেলার সভাপতি এবং লালমোহন প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সোহেল আজিজ শাহীন জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেক জায়গায়ই প্রাশসনের মধ্যে একটি ভীতি কাজ করতে দেখা গেছে। তবে এই উপজেলার ইউএনও তখন থেকেই অত্যন্ত দক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তার দায়িত্বের পরিধি আরো বেড়েছে। তবুও তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের খুবই নিখুঁতভাবে সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমার দৃষ্টিতে লালমোহনের বর্তমান ইউএনও একজন কর্মপরায়ণ মানুষ।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারগণ সর্বদা সরকার ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং সেবা প্রদানের জন্য অঙিকারবদ্ধ। সরকার পরিবর্তনের পর আগের চেয়ে দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। তবে এটিকে আমি চাপ বা বোঝা মনে না করে সরকারের বিভিন্ন স্তরের জনগণকে সেবা দেওয়ার বাড়তি সুযোগ বলে মনে করছি। এই সময়ের কাজগুলো আমার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।