স্টাফ রিপোর্টার:
৪০ বছরের যুবক শ্যামল চন্দ্র দাস। কয়েক বছর আগেও সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল তার। সেলুনে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। তবে করোনাকালীন সময়ে এক দুর্ঘটনায় সব যেন থমকে যায় শ্যামলের। ওই সময় নোয়াখালীর মাইঝদি এলাকায় মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার সংঘর্ষে তার পায়ে প্রচন্ড আঘাত লাগে। যার জন্য নোয়াখালী ও বরিশালে চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। সবশেষ বরিশালের চিকিৎসকদের পরামর্শে যুবক শ্যামলের ডান পা-টি কেটেই ফেলতে হয়েছে। এরপর থেকে শুরু হয় তার দুর্দিন। তাকে চলাফেরা করতে হচ্ছে ক্রাচে ভর করে। দুর্ঘটনায় পা হারানোর কারণে সেলুনের কাজও আর করতে পারছেন না শ্যামল। এখন অভাব-অনটনে চলছে তার সংসার। যুবক শ্যামল চন্দ্র দাস ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্নদা প্রসাদ এলাকার বাসিন্দা। সেখানে সরকারি খাস জমিতে একটি ঘর তুলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকেন তিনি।
যুবক শ্যামল চন্দ্র দাস জানান, বছর চারেক আগেও ভালোভাবেই চলছিল আমার সবকিছু। সেলুনে কাজ করে সংসার চালাতাম। তবে করোনার সময় এক দুর্ঘটনায় আমার ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এরপর থেকে চলাফেলা করতে হচ্ছে ক্রাচে ভর করে। যার জন্য ঠিকমতো দাঁড়াতে এবং চলাফেরা করতে না পারায় সেলুনের ওই কাজটিও আর করতে পারছি না। বর্তমানে লর্ডহার্ডিঞ্জ বাজারের আড়ৎ পট্টি রোডে ছোট একটি দোকানে খিলি পান বিক্রি করি। এর আয় দিয়ে নিজেরই চলতে কষ্ট হয়, সংসার চালাতে পারি না।
তিনি জানান, সংসারে আমার বৃদ্ধ মা, দুই সন্তান এবং স্ত্রী আছেন। স্ত্রী মানুষের দিনমজুরি কাজ করে। এতে করে সে দৈনিক তিনশত টাকার মতো পায়। এছাড়া সন্তানদের মধ্যে সবার বড় ছেলে। অভাবের কারণে খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারে নায় সে। বর্তমানে সেও সেলুনে কাজ করে। সেখান থেকে যে টাকা পায় এবং তার মায়ের দিনমজুরির টাকায় কোনো রকমে সংসারটি চলছে। সংসার কোনো রকমে চলে, তবে যেখানে থাকি তা সরকারি খাস জমি। নিজেদের সম্পত্তি বলতে নেই কিছুই।
যুবক শ্যামল চন্দ্র দাস আরো জানান, স্ত্রী-সন্তান অনেক কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে। বলতে গেলে এখন তাদের আয়ের ওপরই আমি এবং পরিবারের অন্যরা নির্ভরশীল। আমার যে পা-টি কেটে ফেলা হয়েছে, সেখানে একটি কৃত্রিম পা লাগানো গেলে আবারো সেলুনের কাজটি করতে পারতাম। নিজে কাজ শুরু করতে পারলে আরেকটু ভালোভাবে সংসার চালাতে পারবো। বিভিন্ন সময় দেখেছি সরকারি-বেসরকারিভাবে মানুষজনকে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়া হয়। আমাকেও বিনামূল্যে একটি কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিলে যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারবো। সরকারি বা বেসরকারিভাবে আমাকে পায়ের ব্যবস্থা করে না দেওয়া হয় তাহলে আর্থিক অভাবের কারণে নিজের উদ্যোগে কখনোই কৃত্রিম এ পা লাগাতে পারবো না। তাই কৃত্রিম এ পা পেতে আমি সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুদ বলেন, ঢাকার সিআরপিতে এসব কৃত্রিম হাত-পা লাগানো হয়। ওই ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবো, যেন তিনি সহজেই সিআরপি থেকে সেবা নিতে পারেন।